কক্সবাজারে জেলা মডেল মসজিদের উদ্বোধন, দুর্নীতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি

বিভাগীয় প্রতিবেদক। | মার্চ ২২, ২০২৫ | ১১:০৩
ছবি: প্রতিবেদক।

কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুর ১২টায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম খালেদ হোসেন ফিতা কেটে ও ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে মসজিদটির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন, প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ শওকত আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন
উদ্বোধনী বক্তব্যে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম খালেদ হোসেন বলেন, মডেল মসজিদ নির্মাণে অতিরিক্ত ব্যয়, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার এবং কাল্পনিক খরচ দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মডেল মসজিদের গুরুত্ব ও ভূমিকা
উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম খালেদ হোসেন বলেন, সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধ এবং নৈতিকতা ও শিষ্ঠাচার সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে মসজিদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নামাজ মানুষকে অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে এবং ন্যায় ও সত্যের পথে পরিচালিত করে।

তিনি জানান, কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদটি ১৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। এতে চার তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক স্থাপত্য শৈলীসহ নানা সুবিধা রয়েছে, যা বহুমুখী ব্যবহারের জন্য উপযোগী।

মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের তথ্য
ধর্ম উপদেষ্টা জানান, “প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৯,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব মসজিদ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে।” তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিগত সরকারের সময়ে রাজনৈতিক প্রভাবে এমন কিছু স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে জনবসতি নেই, ফলে মুসল্লী পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বিশেষভাবে পেকুয়া ও রাঙ্গুনিয়ার দুটি মডেল মসজিদের অপ্রয়োজনীয় অবস্থান দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

মসজিদের সুবিধাসমূহ
নবনির্মিত জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রয়েছে—
✔ প্রথম তলা: গাড়ি পার্কিং, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, লাশ ধোয়ার ঘর, প্রতিবন্ধীদের নামাজের স্থান, ইসলামিক বুক সেন্টার, গণশিক্ষা কেন্দ্র ইত্যাদি।
✔ দ্বিতীয় তলা: নামাজের মূল স্থান, ইসলামি গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিস।
✔ তৃতীয় তলা: পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক নামাজের স্থান, ইসলামিক লাইব্রেরি, সম্মেলন কক্ষ।
✔ চতুর্থ তলা: হেফজখানা, ইমামের কক্ষ, অতিথি কক্ষ ইত্যাদি।

নামাজের স্থান সংকট ও মুসল্লীদের ক্ষোভ
উদ্বোধনের দিন জুমার নামাজে শত শত মুসল্লী স্থান সংকুলান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নতুন মডেল মসজিদে মাত্র ১১০০ জন পুরুষ ও ১০০ জন মহিলা মুসল্লীর নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে ভেঙে ফেলা পুরাতন কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রায় ১৫০০ মুসল্লী একত্রে নামাজ আদায় করতে পারতেন। স্থানীয় মুসল্লীরা মনে করেন, কক্সবাজার জেলা সদরের মতো জনবহুল এলাকায় অন্তত ৩০০০ মুসল্লীর জায়গার ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন ছিল।

এদিকে, গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, মসজিদের ডিজাইন ও পরিকল্পনা অনুমোদিত ছিল, তাই নির্মাণকালে সেটিতে কোনো পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি।

লোকবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
নবনির্মিত মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন চারটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।
🔹 পদসমূহ:
✔ ইমাম – ১ জন
✔ মোয়াজ্জেম – ১ জন
✔ খাদেম – ২ জন

ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মডেল মসজিদের যাত্রা
উল্লেখ্য, ১৭৯৮ সালে কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা মুনসী উজির আলীসহ কয়েকজন সমাজহিতৈষীর উদ্যোগে ‘মুনসী উজির আলী মসজিদ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীতে ‘কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়। এবার সেটিই ‘কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করল।

ট্যাগঃ

সূত্র: ইন্টারনেট।