গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য নির্বাচিত সরকারই উপযুক্ত: বিএনপি
বিভাগীয় প্রতিবেদক। | মার্চ ২২, ২০২৫ | ০৩:০৩
ছবি: প্রতিবেদক।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জাতীয় ঐক্য ও প্রয়োজনীয় সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি মতামত দিয়েছে যে, একটি নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। শনিবার (২২ মার্চ) বেলা ১১টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র এবং জনগণের মালিকানা প্রতিফলিত হয় নির্বাচিত সংসদ ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
তিনি আরও বলেন, “সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, আইনের শাসন নিশ্চিতকরণ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত করা। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি নির্বাচনসহ সমান্তরালে চলতে পারে। তাই ‘সংস্কার আগে নির্বাচন পরে’ বা ‘নির্বাচন আগে সংস্কার পরে’—এই বিতর্কে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রধান চালিকাশক্তি। তাই এই ঐক্যকে সংরক্ষণ ও শক্তিশালী করাই বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, “আমরা এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চাই না যা এই ঐক্যকে বিনষ্ট করতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখতে হবে এবং কোনো পক্ষকে রাজনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হওয়া যাবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টি সুপারিশ থাকলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি উল্লেখ করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাগুলো সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত না করায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয় যে, এতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার একটি প্রবণতা রয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য।”
বিএনপি মনে করে, জনগণের স্বার্থরক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। দলটির মহাসচিব বলেন, “বৃহত্তর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচিত সরকারই জনগণের কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে সমুন্নত রেখে দীর্ঘ ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সফলতা অর্জন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে জনগণের স্বার্থ ও গণতন্ত্রের আদর্শ সংরক্ষিত থাকবে।”
বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন নতুন সাংবিধানিক কমিশন গঠনের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা কার্যকর হলে নির্বাহী ও আইন বিভাগ দুর্বল হয়ে পড়বে এবং একটি অকার্যকর সরকার ব্যবস্থা তৈরি হবে। তিনি বলেন, “সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, এতে মূলত রাজনীতিবিদদের অপাংতেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে।”
বিএনপি জনগণের স্বার্থরক্ষার জন্য গ্রহণযোগ্য সংস্কার ও অবাধ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। দলটির দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দ্রুত নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করা, যা জনগণের প্রত্যাশিত সংস্কার বাস্তবায়নে সক্ষম হবে।