বিশেষ প্রতিবেদক, চকরিয়া:
এবার উপকূলীয় দস্যুরানী ও চকরিয়ার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আরজ খাতুন (৫২) কুমিল্লার দেবিদ্বারে স্বর্ণ চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারী বিকাল ২টার দিকে কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার পৌরশহরের লতিফ ভূইয়া মার্কেটের একটি স্বর্ণের দোকানে চুরি করতে গিয়ে দুই সহযোগিসহ হাতেনাতে ধরা পড়ে। পরে তাদেরকে জনতা উত্তম মধ্যম দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
জানা যায়, আরজ খাতুন তার দুই সহযোগি পাখি বেগম (৩৫) ও শাহদাত (২০) মিলে ক্রেতা সেজে পৌরশহরের লতিফ ভূইয়া মার্কেটের জয়নাল আবেদীনের মালিকানাধীন একটি স্বর্ণের দোকানে স্বর্ণ ক্রয় করতে যান। তারা কর্মচারীদের বিভিন্ন ডিজাইনের স্বর্ণ দেখাতে বলেন। দোকানের কর্মচারীরা তাদেরকে বিভিন্ন ডিজাইনের স্বর্ণ দেখাতে থাকেন। ওইসময় আরজ খাতুন, পাখি বেগম ও শাহদাত কৌশলে স্বর্ণের চেইন, নাকের ফুল ও হাতের বালা সরিয়ে ফেলেন। তখন স্বর্ণের দোকানের মালিক জয়নাল আবেদীনের সন্দেহ হলে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেন। একপর্যায়ে তাদের শরীরে লুকানো অবস্থায় বেশকিছু স্বর্ণ উদ্ধার করে। পরে স্থানীয় জনতা উত্তম মধ্যম দিয়ে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দেবিদ্বার থানার এসআই ইফতেকার জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। তাদের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা ঢেমুশিয়া ইউনিয়নে। আরজ খাতুন ওই ইউনিয়নের ৪নং, ৫নং ও ৬নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার। দোকানের মালিক জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে আরজ খাতুনকে প্রধান আসামী করে দেবিদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। ২৩ ফেব্রুয়ারী সকালে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে আলোচিত উপকূলীয় দস্যুরাণী আরজ খাতুন গ্রেফতারের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্বস্তির নি:স্বাস ফেলেছেন এলাকাবাসী। তার অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ টু-শব্দ করে না। এতোদিন আরজ খাতুন আওয়ামীলীগের একজন প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
গত বছরের ২৪ মে আরজ খাতুনের নির্দেশে যুবলীগ নেতা আনছুর চকরিয়ার ঢেমুশিয়ায় এক বৃদ্ধকে বিবস্ত্র করে অমানবিক নির্যাতন করেন। নির্যাতনের চিত্র ভিড়িও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন। ভিড়িওটি মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিড়িও ভাইরালের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এলাকাবাসীরা জানায়, চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নটি এখন অপরাধীদের স্বর্গ রাজ্যে পরিনত হয়েছে। এমন কোন দিন নেই ঘটনা ছাড়া। কোন না কোনা ঘটনা ঘটছেই। আরজ খাতুনের সহযোগি সন্ত্রাসী আনছুর নেতৃত্বে দা-বাহিনী, সেলিম বাহিনী, ডালিম বাহিনী, শহিদ বাহিনী ও খোকন বাহিনী নামের বেশ কয়েকটি বাহিনী রয়েছে। এসব বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে দস্যুরাণী আরজ খাতুন। যাদের কাজ ডাকাতি, দখলবাজি, ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসাবে কাজ করা, কাউকে তোয়াক্কা না করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, উক্ত বাহিনীর কারণে এলাকাবাসী চলাচলে সবসময় আতঙ্কে থাকে। কারণ আনছুর, সেলিম, ডালিম, শহিদ ও খোকনকে চাঁদা না দিলেই শান্তিতে কেউ থাকতে পারেনা। লবণ মাঠ, মাছের ঘেরসহ প্রত্যেকটি ব্যবসায় তাদের চাঁদা দিয়েই করতে হয়। বিগত সময়ে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়ে সে দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগ করেছে। আরজ খাতুন বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় কাউকে পরোয়া করেনা। বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ এমন কোন অপকর্ম নাই যা সংগঠিত করছে না। এলাকার সবাই কোনঠাসা এ বাহিনীর কাছে। আরজ খাতুন বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বহু মামলা চলমান রয়েছে। স্থানীয় প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল আলমকে নির্যাতনের ঘটনায় আরজ খাতুন বাহিনীর অপকর্ম উঠে আসে পুরো উপজেলায়। ##